চট্টগ্রাম বন্দর দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর হিসেবে প্রতিবছরই বিপুল মুনাফা করছে। সাম্প্রতিক অর্থবছরে বন্দরের নিট মুনাফা দুই হাজার কোটি টাকার বেশি হলেও, এবার হঠাৎ করে বন্দরের বিভিন্ন সেবার মাশুল এক লাফে ৪১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে—যা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে খরচ বাদে বন্দরের রাজস্ব উদ্বৃত্ত ছিল ২ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। কর পরিশোধের পর নিট মুনাফা দাঁড়ায় ২ হাজার ১৮৪ কোটি টাকায়। এই অবস্থায় চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর থেকে নতুন হারে মাশুল আদায় শুরু হয়েছে। এতে আগামী বছরগুলোতে বন্দরের আয় আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে এমন সময় মাশুল বাড়ানো হলো, যখন সরকার বন্দরের চারটি টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। খুব শিগগির লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল ও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের দায়িত্ব বিদেশি অপারেটরদের হাতে দেওয়া হবে। পরবর্তী ধাপে বে টার্মিনাল প্রকল্পের দুটি টার্মিনালও তাদের হাতে যেতে পারে। সরকার বলছে, এতে বন্দরের সেবার মান বাড়বে।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিদেশি অপারেটরদের সুবিধা দিতে গিয়েই মাশুল বাড়ানো হয়েছে। পোর্ট ইউজার্স ফোরামের আহ্বায়ক আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “বন্দরের মাশুল মার্কিন ডলারে নেওয়া হয়। ডলারের দাম বাড়ায় মাশুল আগেই ৪২ শতাংশ বেড়ে গেছে। এর ওপর আবার ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।” ২০২২ সালের শুরুতে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা, যা এখন বেড়ে ১২২ টাকায় পৌঁছেছে।
মুনাফার চিত্র
দেশে বর্তমানে তিনটি সমুদ্রবন্দর রয়েছে—চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা। এর মধ্যে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশই হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বন্দরের বেশির ভাগ সেবার মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৯৮৬ সালে, পরে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে প্রধান পাঁচটি সেবার মাশুল একবার বাড়ানো হয়।
নিরীক্ষিত হিসাব ও বিভিন্ন প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে চট্টগ্রাম বন্দরের মোট রাজস্ব আয় ছিল প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা। ফলে এক দশকে বন্দরের উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে কর পরিশোধের পর নিট মুনাফা ছিল প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা।
