যশোর জেলা পরিষদের উচ্চমান সহকারী আলমগীর হোসেন দাবি করেছেন, তিনি ঘুষ নেননি—শুধু “দাওয়াত খেয়েছেন আর পাকা কলা খেয়েছেন।” তবে দোকান বরাদ্দের নামে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
রোববার দুপুরে যশোর শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে তিনি এই নির্দেশ দেন। এ সময় জেলা পরিষদসহ যশোরের ৩৭টি দপ্তরের ৭৫টি অভিযোগের শুনানি হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে এই গণশুনানি।
গণশুনানির উদ্বোধনী বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান হাস্যরস করে বলেন, “খবরে দেখলাম দুদক চেয়ারম্যানের চেয়ারের দাম ২০০ কোটি টাকা। আগে শুনতাম চেয়ারের দাম ৫ হাজার কোটি টাকা। তাহলে ৪৮০০ কোটি টাকা তো কমে গেছে!”
এরপর তিনি বলেন, দুর্নীতি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব না হলেও তা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। এজন্য সবার অংশগ্রহণ জরুরি। গণশুনানির উদ্দেশ্য কর্মকর্তাদের জনগণের মুখোমুখি করা নয়, বরং তাদের জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, “যখন এই জেলা ছাড়বেন, তখন যদি মানুষের চোখে পানি আসে, বুঝবেন আপনি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে বিবেক ও সৃষ্টিকর্তার কাছেও জবাবদিহি করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং কোনোভাবেই অনিয়ম বা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। বক্তব্য দেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন, যশোরের পুলিশ সুপার রওনক জাহান এবং দুদক খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক জালাল উদ্দিন আহমেদ।
উদ্বোধনী পর্ব শেষে জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় গণশুনানি শুরু হয়। অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করে দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনার তদন্ত ও আইনগত পদক্ষেপের নির্দেশ দেন।
মূল সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে ছিল—
-
যশোর জেলা পরিষদের আলমগীর হোসেনকে ঘুষের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্তের নির্দেশ।
-
বিআরটিএ অফিস এলাকায় দালালের আধিপত্য দূর করতে সহকারী পরিচালক এএসএম ওয়াজেদ হোসেনকে উদ্যোগ নিতে নির্দেশ, পাশাপাশি আলোচিত দালাল সোহেলকে আটক করার নির্দেশ।
-
যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সেবা ও খাবারের মান উন্নয়ন এবং দালাল উচ্ছেদের নির্দেশ। হাসপাতালের কর্মচারী পবিত্র বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগে দুদক চেয়ারম্যান অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হুসাইন শাফায়াতকে সেবার মান উন্নয়নের নির্দেশ দেন।
-
সড়ক ও জনপদ বিভাগের দুটি সড়কের উন্নয়নকাজে অনিয়মের অভিযোগে তদন্তের নির্দেশ।
-
ভৈরব ও মুক্তেশ্বরী নদী দখল–দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর, পৌরসভা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনকে নিয়ে যৌথ কমিটি গঠনের পরামর্শ।
-
ফতেপুর ইউনিয়নের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার সালমা খাতুন ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগে থানায় মামলা দায়েরের নির্দেশ।
-
স্যানিটারি ইন্সপেক্টর নাজনীন সুলতানার বিরুদ্ধে অভিযোগে বদলিসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ।
-
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগসংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে তদন্তের নির্দেশ।
-
অগ্রণী ব্যাংকের পিয়ন জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তদন্তের নির্দেশ এবং তার সম্পদ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ।
এছাড়া শিক্ষা, ভূমি, রেজিস্ট্রি, পৌরসভা ও অন্যান্য সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগেরও শুনানি ও নির্দেশনা দেওয়া হয়।
দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবেই। সেবা গ্রহণে জনগণ যেন হয় আস্থাশীল—এই গণশুনানির লক্ষ্য সেটিই।”
