
খুলনার দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নে লবণাক্ত জোয়ারে যখন মানুষ নিরাপদ পানির জন্য হাহাকার করছিল, তখন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে লজিক প্রকল্প পরিবর্তন এনেছে স্থানীয়দের জীবনে। ঝুলন্তপাড়ার বাসিন্দা রুমা রানী বলেন,
“আগে বাচ্চারা পানি না পেয়ে স্কুলে যেতে পারত না। এখন বিশুদ্ধ পানি পাই, বাচ্চারা নিয়মিত স্কুলে যায়। বাচ্চারা পড়ালেখা করব, বড় হইব—এটাই আমাদের স্বপ্ন।”
শুধু দাকোপ নয়, সুনামগঞ্জে প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ২১টি বজ্রপাত আশ্রয়কেন্দ্র এখন ঝড়-বন্যায় নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে সুপেয় পানির ব্যবস্থা, স্যানিটেশন সুবিধা এবং বজ্রনিরোধক টাওয়ার। ফলে প্রাণহানি ও পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি কমেছে।
পটুয়াখালীতে আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেমের টাওয়ার এখন দুর্যোগের আগাম বার্তা দেয়, যা হাজারো মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করছে। স্থানীয় বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, “লজিক প্রকল্পের সিগন্যাল টাওয়ারের কারণে এখন আমরা আগেই জানতে পারি তুফান আসবে। প্রস্তুতি নিতে পারি, জীবন বাঁচাতে পারি।”
প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে নির্মিত হয়েছে গাইডওয়াল, কালভার্ট, আশ্রয়কেন্দ্র, ড্রেন ও রাস্তা—যা বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও নদীভাঙনের ক্ষতি কমাতে বড় ভূমিকা রাখছে। নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে আলাদা নিরাপদ সুবিধা।
২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৯টি জেলায় ১,০০৪টি জলবায়ু অভিযোজন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি সুইডেন, ডেনমার্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের সহায়তায় গড়ে ওঠা এই উদ্যোগের লক্ষ্য—গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলা।
লজিক প্রকল্পের এসব উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশ পেয়েছে গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের “লোকাল লিড অ্যাডাপটেশন চ্যাম্পিয়নশিপ অ্যাওয়ার্ড”—যা প্রমাণ করে, একটি ছোট আশ্রয়কেন্দ্র বা টাওয়ারও মানুষের জীবন বাঁচাতে ও টিকে থাকার লড়াইয়ে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।