
খুলনার কয়রা উপজেলার উপকূলীয় মানুষ ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন ও লবণাক্ততার কারণে বসতবাড়ি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। চরামুখার সামাদ সানা ও তাঁর পরিবার নদীর চরে অস্থায়ী ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। সামাদের স্ত্রী আনজুয়ারা বেগম বলেন, “চার বিঘা জমি ছিল, এখন কিছুই নেই। নদীর নোনাপানিতেই গোসল ও রান্না করতে হয়। খাবার পানি আনতে হয় অনেক দূর থেকে।”
শাকবাড়িয়া নদীর মোবারক হোসেন ২২ বিঘা চিংড়িঘের ও পাকা ঘর হারিয়ে শহরের বস্তিতে ঠাঁই নিয়েছেন। বহু পরিবার এখন দিনমজুরি, রিকশা বা ঠেলাগাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
খুলনা জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ বছরে উপকূলে আঘাত হেনেছে ১৩টি ঘূর্ণিঝড়। শুধু ২০২৪ সালে বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ২৪ লাখের বেশি।
উপকূলের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে আজ সোমবার থেকে ব্রাজিলে শুরু হচ্ছে ১১ দিনব্যাপী COP-30 জলবায়ু সম্মেলন। বাংলাদেশ ক্ষতিপূরণ, জলবায়ু অর্থায়ন ও কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জোরালো অবস্থান নিতে যাচ্ছে।
গবেষণা অনুযায়ী, নদীভাঙন ও লবণাক্ততার কারণে জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থান ও স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন না থাকায় নারীদের মধ্যে প্রজননজনিত রোগ ও চর্মরোগ বেড়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী জানান, “মানুষ এখন শহরের বস্তিতেও দারিদ্র্য, জলাবদ্ধতা ও নোংরা পরিবেশে ভুগছে।”
লবণাক্ততার কারণে গত ৫০ বছরে দেশের লবণাক্ত জমি ২৬ শতাংশ বেড়েছে। স্থানীয়রা জানান, নোনাপানিতে গাছপালা মরে যাচ্ছে, মেয়েদের ছোট বয়সে বিয়ে দিতে হচ্ছে, আর স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, “উপকূলীয় মানুষের অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরে আমাদের দাবিগুলো স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া হবে।”
সাইফুল ইসলাম, উপকূল ও সুন্দরবন সংরক্ষণ আন্দোলনের সদস্যসচিব বলেন, “ব্রাজিলে বিশ্বের ১৯৮ দেশের প্রতিনিধিরা জলবায়ু অর্থায়ন, ক্ষতিপূরণ ও কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা করবেন। এবার বাস্তব ক্ষতিপূরণ আশা করা যাচ্ছে।”