শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে ১২৭ কোটি টাকার বেশি অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এসব তথ্যের ভিত্তিতে ফয়সাল করিমের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার–সংক্রান্ত পৃথক অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি।
রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানায়, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এই অস্বাভাবিক লেনদেন শনাক্ত করা হয়েছে। সিআইডির ধারণা, এসব লেনদেন মানি লন্ডারিং, সংঘবদ্ধ অপরাধ কিংবা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে। এ কারণেই বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে ফয়সাল করিম ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের একাধিক ব্যাংক হিসাবে মোট ১২৭ কোটি টাকার বেশি অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। পাশাপাশি অভিযুক্ত ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে থাকা প্রায় ৬৫ লাখ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এসব অর্থের মূল উৎস ও সরবরাহকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান শনাক্ত করতেও অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।
সিআইডি জানায়, গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই ঘটনাটির বিভিন্ন দিক নিয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করা হয়। ঘটনার পর ক্রাইম সিন ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আলামত সংগ্রহ করে। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া গুলির খোসা এবং অন্যান্য আলামত ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
এ ছাড়া গ্রেপ্তার অভিযানের সময় উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বইয়ের তথ্যও গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করে সিআইডি। এসব চেক বইয়ে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থের উল্লেখ পাওয়া গেছে, যা আর্থিক লেনদেনের সন্দেহ আরও জোরালো করেছে।
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফয়সাল করিম মাসুদকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আগে ধারণা করেছিলেন, তিনি সীমান্ত পার হয়ে ভারতে চলে গেছেন। তবে রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, ফয়সাল করিম দেশে আছেন নাকি বিদেশে চলে গেছেন—এ বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।
এ ঘটনায় ইতিমধ্যে ফয়সাল করিমের মা–বাবা, স্ত্রী, শ্যালকসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তাঁর বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।
