পাবনার ঈশ্বরদীতে বস্তাবন্দী করে পুকুরে ডুবিয়ে আটটি কুকুরছানাকে হত্যার হৃদয়বিদারক ঘটনার পর এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ছানাগুলো হারিয়ে মা কুকুরটি ছুটোছুটি করে আর্তনাদ করছিল এবং ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছিল। এমন সময় স্বেচ্ছাসেবীদের উদ্যোগে নতুন চারটি ছানা এনে তার কাছে দেওয়া হয়। এরপর ধীরে ধীরে কুকুরটি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে; এখন দুধ পান করানোর পাশাপাশি ছানাগুলোকে নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ঈশ্বরদিয়ান’-এর তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বুধবার সংগঠনের মুখপাত্র শাহরিয়ার অমিত তাঁর বাড়ির পাশের একটি পোষা কুকুরের দুটি ছানা এনে মা কুকুরটির কাছে দেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামানের উপস্থিতিতে আরও দুটি নতুন ছানা মা কুকুরটির কাছে রেখে যান কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। তাঁরা জানান, নতুন ছানাদের মা মারা গেছে; তাই তাদের বাঁচাতে ছানাহারা কুকুরটির কাছে দেওয়া হয়।
শাহরিয়ার অমিত জানান, তাঁদের সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে কুকুর-বিড়ালসহ বিভিন্ন প্রাণীর সুরক্ষা ও সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ছানাহত্যার ঘটনায় তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মা কুকুরটির আহাজারি দেখে মর্মাহত হন। এরপরই নতুন ছানা দেওয়ার উদ্যোগ নেন। প্রথমে কুকুরটির বিশ্বাস অর্জন কঠিন ছিল, তাই তার বুকের দুধ নতুন ছানাদের খাওয়ানো হয়, যাতে তাদের গায়ে মা কুকুরটির গন্ধ লাগে। এতে মা কুকুরটি সহজেই নতুন ছানাদের গ্রহণ করে।
আজ দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, মা কুকুরটি আগের তুলনায় অনেক ভালো আছে। চার ছানাকে নিয়মিত দুধ পান করাচ্ছে এবং মাঝেমধ্যে তাদের সঙ্গে খেলছে। খাবারও পাচ্ছে এবং গ্রহণ করছে স্বাভাবিকভাবে।
মা কুকুরটির বর্তমান অবস্থায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ইউএনও মনিরুজ্জামান। তিনি জানান, ‘আট ছানা হারানোর পর কুকুরটির কান্না থামানো যাচ্ছিল না। এখন নতুন ছানা পাওয়ার পর সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। তাদের জন্য নিয়মিত খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
এর আগে ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমানের সরকারি বাসায় জন্ম নেওয়া আটটি ছানাকে হত্যার অভিযোগ ওঠে তাঁর স্ত্রী নিশি রহমানের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাতে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বাদী হয়ে নিশিকে আসামি করে মামলা করেন। ওই রাতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরদিন বুধবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
Jatio Khobor