রমনা উদ্যানের অরুণোদয় ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকে বাঁ দিকের পথ ধরে এগোলে কাকরাইল মসজিদের পেছনে সারি করে দাঁড়িয়ে থাকা ৪৯টি ম্যাকআর্থার পাম নজর কাড়ে। এত বড় সংখ্যায় সাজানো ম্যাকআর্থার পামের বীথি ঢাকায় আর কোথাও দেখা যায় না। গাছগুলো একই সময় লাগানো হয়েছিল বলেই মনে হয়। তবে কয়েক জায়গায় কিছু গাছ নেই; সেখানে পরে অন্য প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। হয়তো শুরুতে পুরো রাস্তার ধারে একটানা ম্যাকআর্থার পামের বীথি গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল, যা এখন আর অক্ষত নেই।
গাছগুলোর পরিচর্যার তারতম্যের কারণে কোনো কোনো ঝোপে প্রচুর কাণ্ডের সমাহার, আবার কোথাও মাত্র একটি গাছ কষ্টে টিকে আছে। হাঁটতে গিয়ে এই বৈপরীত্য চোখে পড়লে মনও কখনো খারাপ, কখনো ভালো হয়ে যায়।
সেপ্টেম্বরে এসব গাছে প্রচুর ফুল ফুটতে দেখা গেছে। হেমন্তেও কিছু গাছে ফুল দেখা যায়। কাণ্ডের গিঁট থেকে লম্বা পুষ্পমঞ্জরি ঝুলে থাকে, যা ৪৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। ঘিয়ে-সাদা বা সবুজাভ-হলুদ রঙের ছোট ছোট ফুল দণ্ডের চারদিকে দল বেঁধে ফোটে। প্রতিটি দলে থাকে একটি স্ত্রী ও দুটি পুরুষ ফুল। পুরুষ ফুল তুলনামূলক বড়, আর প্রতিটি ফুলে থাকে তিনটি বৃতি ও তিনটি পাপড়ি।
কিছু গাছে ইতিমধ্যে পাকা হলুদ-লাল ফলও দেখা যাচ্ছে। আবার অনেক গাছে ঝুলছে কাঁচা সবুজ ফল। ফলগুলো সুপারির মতো আকৃতির হলেও আকারে ছোট, ডিম্বাকার ও অগ্রভাগ সুচালো। পাকলে প্রথমে হলুদ, পরে লাল রং ধারণ করে।
ম্যাকআর্থার পামের একাধিক ইংরেজি নাম রয়েছে—ম্যাকআর্থার পাম, ক্লাস্টার পাম, হারিকেন পাম, ম্যাকআর্থার ফেদার পাম ইত্যাদি। উনিশ শতকের অস্ট্রেলীয় উদ্যানতত্ত্ববিদ উইলিয়াম ম্যাকআর্থারের নামানুসারে মালি থমাস রিডি এ নামকরণ করেন। এর বৈজ্ঞানিক নাম Ptychosperma macarthurii, গোত্র অ্যারিকেসি।
দ্রুত বর্ধনশীল এই চিরসবুজ পামগাছে গোড়া থেকে একাধিক কাণ্ড জন্মায়। প্রতিটি কাণ্ড ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু ও প্রায় ৪ সেন্টিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট হতে পারে। কাণ্ডের মাথায় ঝুলে থাকা পাতাগুলো সুপারির মতো দীর্ঘ; এক গাছে ৩ থেকে ১৩টি পাতা থাকে। ৩ মিটার দীর্ঘ পাতার দুই পাশে থাকে অনিয়মিত চিরুনির দাঁতের মতো পত্রক, যেগুলো দেখতে আকর্ষণীয়—উপরের পিঠ গাঢ় সবুজ ও চকচকে, নিচের পিঠ হালকা সবুজ।
ম্যাকআর্থার পামের একাধিক কাণ্ডবিশিষ্ট ঝোপ পার্ক ও রাস্তার ধারের সৌন্দর্য বাড়ায় বলেই বিভিন্ন উদ্যানবিন্যাসে এ গাছের ব্যবহার বাড়ছে। এর আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনি।
Jatio Khobor