একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে হলে নির্বাচন কমিশন (ইসি), সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম—সব অংশীজনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে প্রধান দায়িত্ব ইসির, যেহেতু সংবিধান তাঁদের স্বাধীনতা ও নির্বাচন পরিচালনার পূর্ণ ক্ষমতা দিয়েছে।
তবে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরপেক্ষ না হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া কঠিন। একইভাবে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণও নির্বাচনী পরিবেশকে প্রভাবিত করে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ, নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গঠিত বর্তমান ইসি কোনো দলের প্রতি অনুগত নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু দলগুলোর মনোনয়ন নিয়ে বিরোধ, সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা নির্বাচনী পরিবেশকে কলুষিত করছে।
তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থী চূড়ান্ত করার পর্যায়ে অশুভ প্রতিযোগিতা বাড়তে পারে। মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ছলা–কলা–কৌশল প্রয়োগ করলে তা সুষ্ঠু নির্বাচনের বড় বাধা হবে। ফলে এখন রাজনৈতিক দলের ওপরই দায়িত্ব বেশি।
নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। নাগরিক সমাজকে ‘ওয়াচডগ’ হয়ে জনগণকে সচেতন করতে হবে, যদিও বর্তমান সময়ে তাদের বড় অংশকে দুর্বল বা নিরপেক্ষতার বাইরে মনে করা হচ্ছে। গণমাধ্যমেও পক্ষপাতিত্ব দেখা যায়।
ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে বড় প্রশ্ন না থাকলেও তারা আইন প্রয়োগে কতটা সাহস দেখাতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে মনোনয়ন প্যানেল তৈরির আরপিও নির্দেশনা মানেনি কোনো দল—তবুও ইসি কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
তফসিল ঘোষণার পর মানুষের মধ্যে নির্বাচনী সন্দেহ অনেকটাই কমেছে। তবু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে সহিংসতা অব্যাহত রাখলে নির্বাচন আবার অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে। পলাতক বা পরাজিত শক্তিও এই পরিস্থিতিতে সুযোগ নিতে পারে।
সব মিলিয়ে, সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে সবচেয়ে বড় বাধা—রাজনৈতিক দলের অশুভ প্রতিযোগিতা ও সহিংসতা। এটি থামাতে পারলেই সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম হবে।
Jatio Khobor