বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, একটি রাজনৈতিক দল এখন জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের সুযোগ খুঁজছে। তবে তিনি কোনো দলের নাম উল্লেখ করেননি। তাঁর ভাষায়, দলটির কিছু দাবিদাওয়া রয়েছে এবং সে বিষয়ে আলাপ–আলোচনা চলছে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত ‘চব্বিশোত্তর বাংলাদেশের তারুণ্যের ভাবনায় শিক্ষা ও কর্মসংস্থান’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, গতকাল একটি রাজনৈতিক দল দাবি করেছে যে জনমতের চাপে বিএনপি জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এই গণভোটের প্রস্তাব বিএনপির পক্ষ থেকেই দেওয়া হয়েছিল।
তিনি জানান, জুলাই সনদ ১৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হলেও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি। দুটি রাজনৈতিক দল ছাড়া বাকি সবাই গণভোটের প্রস্তাবে একমত হয়েছে। এর মধ্যে একটি দল সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে, অপর দলটি এখন সনদে স্বাক্ষর করার সুযোগ খুঁজছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, “সবচেয়ে প্রয়োজন আমাদের মানসিক সংস্কার। আইনগত ও সাংবিধানিক সংস্কার নিয়ে যত আলোচনা হোক না কেন, যদি মানসিক পরিবর্তন না আসে, কোনো সংস্কারই কার্যকর হবে না।”
তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টার আইন জারি করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কোনো অধিকার নেই। সংবিধান অনুযায়ী সরকারপ্রধানের এমন ক্ষমতা নেই। এ বিষয়ে কেউ যদি ‘এক্সট্রা কনস্টিটিউশনাল অর্ডার’ দেওয়ার কথা বলেন, তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের ধারণাকে ‘রাজনৈতিক আবেগ’ বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তাঁর মতে, রাষ্ট্র চলে আইন ও বিধিবিধানের ভিত্তিতে, কোনো আবেগের ওপর নয়।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে “মনে আনন্দ পাওয়ার মতো” প্রস্তাব না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, “যাঁর জারি করার কথা, তিনি না করলে ভবিষ্যতে বিতর্ক উঠবে। তাই আমাদের আবেগ নয়, বাস্তব ও যুক্তিনির্ভর পথে এগোতে হবে।”
বাংলাদেশে জমির তুলনায় জনসংখ্যার অনুপাত অস্বাভাবিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমেই অর্থনৈতিক ভারসাম্য আনতে হবে। শুধু সরকারি চাকরির সুযোগে সমস্যা সমাধান হবে না; বরং ব্যক্তিগত উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান ও শাহ শামীম আহমেদ।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর বলেন, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা স্নাতকদের যথাযথ দক্ষ করে তুলতে পারছে না। ফলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে।
ইউট্যাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার বলেন, শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ, বিশ্লেষণধর্মী ও সমালোচনামূলক দক্ষতা বিকাশে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
জাতিসংঘের সাবেক চিফ অব স্টাফ রেহান এ আসাদ বলেন, শিক্ষাকে শিল্পখাতের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে এবং ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম আবদুল আওয়াল শিক্ষার্থীদের জন্য সুদমুক্ত ঋণ ও ক্যাম্পাসভিত্তিক চাকরির সুযোগ সৃষ্টির আহ্বান জানান।
সভাপতিত্ব করেন ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। তিনি বলেন, “সিঙ্গাপুরভিত্তিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের শিক্ষার মান এমন অবস্থায় পৌঁছেছে, যেখানে এইচএসসিকে সপ্তম ও স্নাতককে এইচএসসির সমতুল্য ধরা হচ্ছে—এটি লজ্জাজনক।”
তিনি শিক্ষার মান উন্নয়নে কারিকুলাম পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন খান ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন প্রমুখ।
Jatio Khobor