ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ভিয়েতনাম ‘মিরাকল’ থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Oct 26, 2025 ইং
ভিয়েতনাম ‘মিরাকল’ থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা ছবির ক্যাপশন: সায়গনের পতনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভিয়েতনামে সামরিক প্যারেড
ad728

ভিয়েতনামের মডেল: ‘একুশ শতকের সমাজতন্ত্রে’ উন্নয়নের মিরাকল

সংবিধান সংস্কারের প্রক্রিয়ায় সমাজতন্ত্রের নীতি বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে—যা বৈষম্য নিরসনের জন্য গুরুতর হুমকি। যদিও সোভিয়েত ধাঁচের সমাজতন্ত্র বিংশ শতকের শেষভাগে পরিত্যক্ত হয়েছে, একুশ শতকের বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সমাজতান্ত্রিক মডেল আজও বিশ্বজুড়ে সফলভাবে অনুসৃত হচ্ছে। এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ভিয়েতনাম।

১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে দক্ষিণ ভিয়েতনামে মার্কিনপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ২০ বছর ধরে উত্তর ভিয়েতনামের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলে। প্রায় ২০ লাখ প্রাণহানির পর ১৯৭৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করে বিজয় অর্জন করে ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের মতোই এক বিধ্বস্ত অর্থনীতি নিয়ে তারা স্বাধীনতা-পরবর্তী যাত্রা শুরু করে—তখন তাদের মাথাপিছু জিডিপি ছিল মাত্র ৬৫ ডলার।

১৯৮৬ সালে ভিয়েতনাম ‘দই মই’ নামে একটি সংস্কার কর্মসূচি চালু করে, যার লক্ষ্য ছিল বাজারমুখী অর্থনীতিকে সমাজতান্ত্রিক ভিত্তির সঙ্গে সমন্বয় করা। এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত মালিকানা পুনর্বহাল, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উদারীকরণ, সরকারি হস্তক্ষেপ হ্রাস এবং শিক্ষা–অবকাঠামোতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এর ফলেই ভিয়েতনাম আজ একটি “সোশ্যালিস্ট-ওরিয়েন্টেড মার্কেট ইকোনমি” মডেলে উন্নত অর্থনীতির দিকে এগিয়ে চলেছে।

আজ ভিয়েতনামের জিডিপি ৪৯০ বিলিয়ন ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৪,৮০০ ডলারের বেশি—যা ১৯৮৫ সালের তুলনায় প্রায় ১৭ গুণ। মাত্র ২ শতাংশ জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে। দেশটির শতভাগ মানুষ স্বাস্থ্যবিমার আওতায়, আর প্রাথমিক ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় অর্জন করেছে শতভাগ সাক্ষরতা।

দুই সন্তান নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তারা দুর্নীতি দমন ও আয়বৈষম্য হ্রাসে সফল। রাজধানীমুখী উন্নয়নের পরিবর্তে গ্রামীণ অর্থনীতিকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ভিয়েতনাম এখন বিদেশি বিনিয়োগের অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য—স্যামসাং, এলজি, পাইওনিয়ারসহ বহু বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান সেখানে তাদের উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করেছে।

তৈরি পোশাক, ইলেকট্রনিক্স, চাল ও কফি রপ্তানিতে ভিয়েতনাম বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে। ২০২৪ সালে দেশটির রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪০৫ বিলিয়ন ডলারে—যা বাংলাদেশের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি।

অর্থনৈতিক সাফল্যের পেছনে ভিয়েতনামের মূল শক্তি হলো শিক্ষিত ও পরিশ্রমী শ্রমশক্তি, দুর্নীতির নিম্ন মাত্রা এবং দেশীয় পুঁজি বিদেশে পাচারের অনুপস্থিতি। বিপরীতে, বাংলাদেশের দীর্ঘ একদলীয় শাসন, দুর্নীতি ও পুঁজি পাচার উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

সোভিয়েত মডেলের সীমাবদ্ধতা ভিয়েতনাম বুঝে নিয়েছিল সময়মতো, আর ‘দই মই’ সংস্কার প্রমাণ করেছে—সমাজতন্ত্রকে যুগোপযোগী করে তোলাই টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।

—ড. মইনুল ইসলাম
সাবেক অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়


নিউজটি পোস্ট করেছেন : Jatio Khobor

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তে আবার উত্তেজনা, হামলায় ৩ বাংলাদেশি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তে আবার উত্তেজনা, হামলায় ৩ বাংলাদেশি