ঢাকা | বঙ্গাব্দ

সংগ্রাম ও ইতিহাসের সাক্ষী বিএম কলেজ গৌরব হারাচ্ছে

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Oct 22, 2025 ইং
সংগ্রাম ও ইতিহাসের সাক্ষী বিএম কলেজ গৌরব হারাচ্ছে ছবির ক্যাপশন: ব্রজমোহন কলেজের মূল ভবন
ad728

১৮৮৯ সালে ‘সত্য, প্রেম ও পবিত্রতা’ এই তিন আদর্শকে ধারণ করে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতীরে অশ্বিনী কুমার দত্ত প্রতিষ্ঠা করেন ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ। একসময় দক্ষিণাঞ্চলের শিক্ষার বাতিঘর হিসেবে খ্যাত এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান এখন নানা সংকটে জর্জরিত। শিক্ষকস্বল্পতা, শ্রেণিকক্ষের অভাব, আবাসনঘাটতি ও দুর্বল পরিবহন ব্যবস্থা—সব মিলিয়ে ম্লান হয়ে পড়ছে এর গৌরবময় ইতিহাস।

বিএম কলেজে বর্তমানে ২২টি বিভাগে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩২ হাজার। তবে অনুমোদিত ১৯৯টি শিক্ষকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ১৬৫ জন। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি বিভাগে কমপক্ষে ১২ জন শিক্ষক থাকার কথা, কিন্তু কোনো বিভাগেই সেই সংখ্যা পূরণ হয়নি। ফিন্যান্স বিভাগে আছেন মাত্র দুজন শিক্ষক, আর মার্কেটিং বিভাগে মাত্র একজন। ফলে বেশির ভাগ বিভাগে তিন-চারজন শিক্ষক দিয়েই পুরো পাঠক্রম চালাতে হচ্ছে।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী নাইম ইসলাম বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষের অভাবে প্রতিটি বিভাগেই ক্লাস সংখ্যা কমিয়ে আনতে হয়। আবার শিক্ষকসংকটের কারণে পুরো সিলেবাস শেষ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।’

আবাসনের সংকট ও ঝুঁকি

কলেজটির সবচেয়ে বড় সমস্যা আবাসন। ৩২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র আড়াই হাজারের থাকার সুযোগ আছে ছাত্রাবাসে। ছেলেদের জন্য তিনটি ও মেয়েদের জন্য একটি আবাসন মিলিয়ে মোট আসনসংখ্যা ১ হাজার ১৫০। তাতেই গাদাগাদি করে থাকছেন প্রায় দ্বিগুণ শিক্ষার্থী। বাকিদের থাকতে হয় বাইরের মেসে, যা ব্যয়বহুল ও অনিরাপদ।

অশ্বিনী কুমার ছাত্রাবাসের ‘এ’ ব্লকের ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে, দেয়াল ও মেঝে দুর্বল হয়ে গেছে। শিক্ষার্থী আকবর মোবিন বলেন, ‘আমরা গাদাগাদি করে থাকি, কিন্তু সবচেয়ে ভয় লাগে ছাদের জন্য। প্রায়ই পলেস্তারা খসে পড়ে—কখন বড় দুর্ঘটনা হবে বলা যায় না।’ ইতিমধ্যে প্রশাসন হলের দুটি কক্ষ পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে।

ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক হলের টিনশেড অংশও বসবাসের অযোগ্য। স্যাঁতসেঁতে দেয়াল, ফাটল ধরা মেঝে, নোংরা পরিবেশ—সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। বর্ষার সময় কক্ষে পানি ঢোকে, এমনকি সাপ-বিছাও দেখা যায় বলে অভিযোগ আছে।

মেয়েদের বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসের অবস্থাও একই রকম। দর্শন বিভাগের ছাত্রী সুবর্ণা খানম বলেন, ‘একটি শয্যায় দুজন করে থাকতে হয়। ছাত্রীনিবাসের পেছনের প্রাচীর ভেঙে গেছে, নিরাপত্তা নেই বললেই চলে।’

বাইরে মেসে ২০ হাজার শিক্ষার্থী

৩২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র আড়াই হাজার জন ছাত্রাবাসে থাকতে পারায় ২০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে মেসে থাকতে হয়। অর্থাৎ, কলেজের মাত্র ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন, বাকি ৯৩ শতাংশকে অতিরিক্ত ব্যয়ে বাইরেই থাকতে হচ্ছে।

ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘মেসে থাকতে মাসে অন্তত দেড় হাজার টাকা ভাড়া, ৪ হাজার ৫০০ টাকা খাবার, আর অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ৭ হাজার টাকা লেগে যায়। অথচ হল পেলে আড়াই হাজার টাকায় মাস কাটানো সম্ভব হতো। এই বাড়তি খরচ আমাদের পরিবারের জন্য বড় বোঝা।’

একই বিভাগের জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘মাস শেষে যখন এত টাকা বাড়ি থেকে পাঠাতে হয়, তখন বাবা-মায়ের ওপর চাপ পড়ে। এতে আমরাও মানসিকভাবে কষ্ট পাই।’


নিউজটি পোস্ট করেছেন : Jatio Khobor

কমেন্ট বক্স