বাংলা সংগীতের স্বর্ণযুগের অন্যতম শিল্পী রফিকুল আলম। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে যাচ্ছেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর চারটি নতুন গান—আরও কয়েকটি তৈরি হচ্ছে। নতুন কাজ, প্রযুক্তির প্রভাব, মৌলিক সংগীতের টিকে থাকা এবং করপোরেট প্রভাব নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
মৌলিক গানের সংকট নিয়ে রফিকুল আলম বলেন, “আমি সব সময় নিজের গাওয়া গানই গাইতে চাই। মৌলিক গান টিকিয়ে রাখাই শিল্পীর পরিচয়। কিন্তু এখনকার বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রযুক্তি। গান তৈরি থাকলেও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে শ্রোতার কাছে পৌঁছাতে পারছি না।”
প্রযুক্তি ও নতুন প্রজন্মের সংগীতচর্চা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আগে প্রযুক্তি সহায়ক ছিল, এখন প্রযুক্তিই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। আমাদের ইচ্ছা, ভালো লাগা, এমনকি রুচিও প্রযুক্তি নির্ধারণ করছে। ভবিষ্যতে এআই আরও বড় ভূমিকা নেবে। তবে ভালো গান হলে এই মাধ্যমেও জয় সম্ভব।”
বর্তমান সংগীতজগৎ ও করপোরেট প্রভাব নিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, “করপোরেট জগৎ মানুষের আবেগ বোঝে না, তারা যুক্তির হিসাবেই চলে। একজন অভিজ্ঞ শিল্পীর পেছনে বিনিয়োগের চেয়ে তারা চটুল গানে টাকা ঢালতে চায়। এ কারণেই সৃষ্টিশীলতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।”
তিনি মনে করেন, এখন শ্রোতার দায়িত্ববোধও কমে গেছে। “আগে শ্রোতারা গান নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাত, ভালো লাগলে প্রশংসা করত, খারাপ লাগলে বলত। এখন তা নেই,” বলেন রফিকুল আলম।
আবিদা সুলতানার সঙ্গে দীর্ঘ সংগীতজীবন নিয়ে তিনি বলেন, “বিদেশি ভাষার গান গাওয়ার অনুপ্রেরণা আবিদার কাছ থেকেই পেয়েছি। ফ্রেঞ্চ, আরবি, মঙ্গোলিয়ান—সব ভাষায় ও দারুণ গায়।”
নিজের প্রিয় গানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার জীবনের সেরা গান ‘কখনো আমার মাকে’। কবি শামসুর রাহমানের লেখা, সত্য সাহার সুরে। এই গানের গভীরতা ও সুর আমাকে আজও নাড়া দেয়।”
সংগীতের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হলেও কিছুটা দুঃখও প্রকাশ করেন তিনি—
“সংগীত নিজের গতিতে চলে, তবে এখন সারা পৃথিবীতে মৌলিক গানের খরা চলছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স বা জার্মানির মতো দেশে গত ২০ বছরে কোনো নতুন গান আলোড়ন তুলতে পারেনি।”
Jatio Khobor