দেশীয় মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ‘চায়না দুয়ারি’ জাল নিষিদ্ধের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন স্থানীয় জেলেরা। বরেন্দ্র অঞ্চলের নদ–নদী, খাল–বিল ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়ে তাঁরা এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে সবুজ সংহতি ও উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বারসিকের যৌথ উদ্যোগে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচি শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে ‘চায়না দুয়ারি’ জাল নিষিদ্ধসহ পাঁচ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এ সময় জেলেরা ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার সরঞ্জাম—খোরা জাল, পলো, চাঁই, খলই ও বিনকি হাতে নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন। তাঁদের ব্যানারে লেখা ছিল, “চায়না দুয়ারি জাল বন্ধ করো, দেশীয় মাছ রক্ষা করো।”
কর্মসূচিতে বারসিকের গবেষক ও আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. শহিদুল ইসলাম বরেন্দ্র অঞ্চলের জেলেদের পর্যবেক্ষণভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, অঞ্চলের প্রায় সব নদ–নদী ও খাল–বিলে ‘চায়না দুয়ারি’ জাল দিয়ে নির্বিচারে মাছ ধরা হচ্ছে। ছোট ফাঁসের কারণে এতে পোনা মাছও ধরা পড়ে মারা যাচ্ছে, ফলে দেশীয় মাছ ও জলজ জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, মৎস্য সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ৪ দশমিক ৫ সেন্টিমিটারের কম ফাঁসের জাল নিষিদ্ধ হলেও তা কার্যকরভাবে মানা হচ্ছে না, যার প্রভাবে মাছের পাশাপাশি জলজ উদ্ভিদ, পাখি, ব্যাঙ, কচ্ছপসহ পুরো জলজ বাস্তুতন্ত্র বিপর্যস্ত হচ্ছে।
গোকুল-মথুরা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আগে বিলকুমারী বিলে বহু জাতের মাছ ছিল, এখন প্রায় কিছুই নেই। চায়না জালের কারণে মৌসুমেও আমরা মাছ পাই না।” একই এলাকার জেলে আফাজ উদ্দিন কবিরাজ বিলের হারিয়ে যাওয়া মাছের কথা স্মরণ করে এসব জাল অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানান।
সবুজ সংহতি রাজশাহীর আহ্বায়ক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, “আইন থাকলেও মাঠপর্যায়ে এর প্রয়োগ নেই। চায়না দুয়ারি জালের আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। এ জালের কারখানাগুলোও বন্ধের আওতায় আনতে হবে।”
মানববন্ধনে বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল চেঞ্জের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিকের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন নওহাটা মৎস্যজীবী সমবায়ের সাধারণ সম্পাদক আবু সামা, জেলে রঘুনাথ হালদার, সামাজিক কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সম্রাট রায়হান, আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি উপেন রবিদাস ও জুলাই ৩৬ পরিষদের আহ্বায়ক মাহমুদ জামাল কাদেরী প্রমুখ।
Jatio Khobor