ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি তাদের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। ঘোষিত ২৩৬টি আসনের মধ্যে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য রাখা হয়েছে তিনটি আসন—ফেনী–১, বগুড়া–৭ ও দিনাজপুর–৩। আইন অনুযায়ী, একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন, যা বিএনপির কৌশলগত সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত যতগুলো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন খালেদা জিয়া, সব কটিতেই বিপুল ভোটে জিতে নজির গড়েছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটি এক ব্যতিক্রমী সাফল্য। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নির্বাচনী ইতিহাসেও এমন ধারাবাহিক জয় নেই।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়া সব সময়ই ছিলেন বিএনপির প্রতীকী ও নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দু। দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালে কারাবন্দী হওয়ার পরও তাঁর জনপ্রিয়তা কমেনি বলে মনে করে দলটি। বিএনপির দাবি, মামলাটি ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
জেলে যাওয়ার আগে তিনি তাঁর ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন। লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানই বর্তমানে দলের নেতৃত্বে রয়েছেন এবং মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
যদিও খালেদা জিয়া বর্তমানে শারীরিকভাবে অসুস্থ ও রাজনীতিতে সরাসরি সক্রিয় নন, তবু দলের ভরসা এখনো তাঁর ওপরই। দলের ভেতরে অনেকেই বিশ্বাস করেন, তাঁর নামই বিএনপির নির্বাচনী প্রচারে প্রাণ সঞ্চার করবে।
খালেদা জিয়া সব সময় আপসহীন রাজনীতির প্রতীক হিসেবে পরিচিত। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তাঁর দৃঢ় অবস্থান তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নানা প্রতিকূলতার মুখেও তিনি নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন।
এনসিপি ও গণ অধিকার পরিষদ খালেদা জিয়ার আসনে প্রার্থী না দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তাঁর নেতৃত্বের প্রতি সম্মান জানিয়েছে। রাজনৈতিক মহলে এটিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাইরেও এক ধরনের শ্রদ্ধা প্রদর্শন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিএনপির প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর কিছু এলাকায় সহিংসতা ও বিক্ষোভ হলেও, দলের ভেতরে অনেকে মনে করেন, শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার নামই সব বিরোধ মিটিয়ে দেবে। তাঁর ভাবমূর্তি ও রাজনৈতিক ঐতিহ্যই দলের সবচেয়ে বড় শক্তি।
দলের তৃণমূল পর্যায়ের অনেকেই বলছেন—বেগম খালেদা জিয়া নিজে প্রচারে না গেলেও তাঁর নাম ও ইতিহাসই বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে এগিয়ে নেবে।
Jatio Khobor