ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ধর্মীয় বিভাজন ও নতুন ‘ভাবাদর্শের স্বাভাবিকতা’ নিয়ে বিতর্ক

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Dec 12, 2025 ইং
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ধর্মীয় বিভাজন ও নতুন ‘ভাবাদর্শের স্বাভাবিকতা’ নিয়ে বিতর্ক ছবির ক্যাপশন: ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ধর্মীয় বিভাজন ও নতুন ‘ভাবাদর্শের স্বাভাবিকতা’ নিয়ে বিতর্ক
ad728

ভারতের সেনাবাহিনী থেকে ২০২১ সালে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী লেফটেন্যান্ট স্যামুয়েল কমলেসানকে বরখাস্ত করা হয়। তিনি তাঁর রেজিমেন্টের মন্দির ও গুরুদুয়ারার পবিত্র স্থানে প্রবেশে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। বহিষ্কারের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নামলেও সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট তাঁর পুনর্বহালের আবেদন নাকচ করে দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহুদিন ধরে চাপা থাকা ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভেতরের ধর্মীয় বিভাজন ও পরিবর্তিত ভাবাদর্শ এখন প্রকাশ্যে এসেছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ধর্মভিত্তিক স্পর্শকাতরতা নতুন নয়, তবে এত দিন তা গোপনেই থেকেছে। কমলেসানকে বরখাস্তের মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও ধর্মীয় সংবেদনশীলতা স্পষ্ট হয়েছে। এটি শুধু একজন কর্মকর্তার মামলা নয়—বরং বাহিনীর গভীর কাঠামোগত সংকটের প্রতিফলন, যা নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলদেরও সতর্ক মন্তব্য করতে হয়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলদের মতে, সেনাবাহিনীতে ধীরে ধীরে ‘নতুন স্বাভাবিকতা’ গড়ে উঠছে—যেখানে দেশপ্রেম ও সামরিক বিশ্বাসযোগ্যতা সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের দৃশ্যমান অনুশীলনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এটি বাহিনীর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার নীতির পরিপন্থী।

বিস্তৃত সামাজিক ভিত্তি ও রাজনৈতিক প্রভাব

সেনাবাহিনী ভারতের সবচেয়ে বড় ও সমাজমুখী বাহিনী। এখানে অঞ্চল, জাতি ও সম্প্রদায়ভিত্তিক নিয়োগ ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে, যা বাহিনীকে রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপের প্রতি বেশি সংবেদনশীল করে তোলে। বিদ্রোহ দমন, ত্রাণকাজ ও সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত জনগণের সঙ্গে সরাসরি কাজ করায় এই সংবেদনশীলতা আরও গভীর।

এর বিপরীতে বিমান ও নৌবাহিনী তুলনামূলকভাবে প্রযুক্তিনির্ভর ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত।

গত এক দশকে রাজনৈতিক প্রভাবের এই প্রবণতা তীব্র হয়েছে। সেনাবাহিনীর অপারেশন, বিন্যাস, অনুশীলনের নামকরণেও এখন হিন্দু পুরাণ ও পৌরাণিক প্রতীক যুক্ত হচ্ছে—যা আগে কেবল রেজিমেন্টের অনানুষ্ঠানিক গল্প বা লঙ্গরখানায় সীমাবদ্ধ ছিল।

‘প্রজেক্ট উদ্ভব’: ভাবাদর্শের নতুন কাঠামো

২০২৩ সালে চালু হওয়া ‘প্রজেক্ট উদ্ভব’ সেনাবাহিনীর এই নতুন রূপান্তরের বড় উদাহরণ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ প্রকল্পের লক্ষ্য—‘প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞানকে আধুনিক সামরিক অনুশীলনের সঙ্গে যুক্ত করা’। চাণক্যের অর্থশাস্ত্র, কামান্দকের নীতিসার, তিরুক্কুরালের মতো গ্রন্থকে সামরিক নীতি ও কৌশলের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সরকার এটি ‘সভ্যতার মিশন’ হিসেবে তুলে ধরলেও সমালোচকেরা মনে করেন—এ উদ্যোগের পেছনে শক্তিশালী রাজনৈতিক ভাবাদর্শ কাজ করছে।

সেনাপ্রধানের মন্দির সফর ও বিতর্ক

ভারতের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীর বারবার মন্দির সফর, গেরুয়া পোশাকে প্রার্থনা এবং রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ধর্মীয় অনুষঙ্গে উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে। বিশেষ করে পরিধান করা সামরিক ইউনিফর্মে আধ্যাত্মিক নেতার আশ্রমে গিয়ে ‘রাম–মন্ত্র গ্রহণ করা’ ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিষয়কে ‘দক্ষিণা’ হিসেবে উল্লেখ করা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মতে, ব্যক্তিগতভাবে ধর্ম পালন করা স্বাভাবিক হলেও এর ছবি সরকারি মাধ্যমে প্রচার করা সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতার ক্ষতি করছে।

ভবিষ্যৎ সংকট

একদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের রাজনৈতিকভাবে দৃশ্যমান প্রভাব, অন্যদিকে লেফটেন্যান্ট কমলেসানকে পুনর্বহাল না করার মতো সিদ্ধান্ত—এই দুইয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী অভ্যন্তরীণ উত্তেজনার মুখোমুখি হয়েছে।

চূড়ান্ত বিচারে, সেনাবাহিনীর মর্যাদা ধর্মীয় অনুশীলন বা সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী নয়—বরং পেশাদারিত্ব, সেবাদান, দক্ষতা ও দেশের প্রতি অবিচল আনুগত্যের ওপর নির্ভরশীল। যদি বাহিনী শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্বকে ধর্মীয় বা রাজনৈতিক প্রতীকীর ঊর্ধ্বে রাখতে ব্যর্থ হয়, তবে আদালতের কোনো হস্তক্ষেপই পরিস্থিতি বদলাতে পারবে না—তা প্রতীকী হয়েই থাকবে।


নিউজটি পোস্ট করেছেন : Jatio Khobor

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসের ঝোড়ো ইনিংস: ৮১ বলে ২২

নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসের ঝোড়ো ইনিংস: ৮১ বলে ২২